আমার আর শীত করেনা

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

ধীমান বসাক
  • ১৭
  • 0
  • ২১
ডিসেম্বরের শীতের রাত, ভয়ঙ্কর ঠান্ডা
লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম আমি।
বৃহস্পতিবার, রাত ৩টে বাজে।
ইংরেজী মতে ৯ই ডিসেম্বর, ২০১১।
হঠাৎ মোবাইল ফোনের রিংটোনে
ঘুম ভেঙ্গে গেল। ‘তুমি আজ কত দূরে..’
রাত ১২টায় ঘুমিয়েছি,কলকাতা থেকে ফিরে
ফোনটা ধরে হ্যালো বলতে না বলতেই
মামার গলা পেলাম, ‘ধীমু শিগগীর চলে আয়
আমার খুব গরম লাগছে, আমার দম
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমাকে বাঁচা আঃ আঃ…।‘
আর কোন আওয়াজ নেই, খানিকক্ষন
মামা, মামা, করে চেঁচালাম, তারপর
লাফদিয়ে উঠে জামাপ্যান্ট পরে তৈরি হয়ে
৩টে ৩০মিনিটের ট্রেন ধরতে ছুটলাম ।


ট্রেনে চেঁপে হসপিটালে ফোন করলাম
কেউ ধরলোনা । শুধু রিং হয়ে গেল ।
মনে পরলো হার্টের অসুখে ৩রা ডিসেম্বর
কলকাতার সেরা হসপিটাল AMRI-তে
মামাকে ভর্তি করেছিলাম, আজ ১২টায়
তাকে ছুটি দেওয়ার কথা । সাত লাখ টাকা
খরচ হয়ে গেছে ! হঠাৎ কি হ’ল ?
কেউ ফোন ধরছে না কেন, সত্যি কী!!!!!

ট্রেনটাও যেন আস্তে চলছে,
প্রতিটা সেকেন্ড যেন এক এক ঘন্টা।
অবশেষে ৫টা ৩৫শে শিয়ালদা পৌঁছে
ট্যাক্সি চেঁপে ৬টা নাগাদ ঢাকুরিয়া AMRI.

কোথায় হাসপাতাল? এ যে জতুগৃহ!
দাও দাও করে জ্বলছে,আর মরণ আর্তনাদ
ধ্বনিত হচ্ছে বাঁচাও বাঁচাও! দমকলের
একজনের কাছথেকে ধাক্কা মেরে একটা
মুখোশ ছিনিয়ে মুখে লাগিয়ে পিছনের রেইন পাইপ
বেয়ে উঠলাম ৫ তলায়, অনেক স্থানীয়
ছেলেও ঐভাবে উপরে উঠে দড়ি বেঁধে লাশ নামাচ্ছে।



পাঁচ তলায় কালো ধোঁয়া ভরতি, কয়েকজন মিলে
A.C.-র কাঁচভেঙ্গে ফেললাম। ধোঁয়ার কুন্ডলি সরে যেতেই দেখি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
মামা বেড থেকে নেমে কাঁচ ভাঙ্গার
চেষ্টা করেছিল,পারেনি, বারান্দা-তেই দমবন্ধ
হয়ে মরেছিল, হাতে তখনো ধরা মোবাইল!


মামী সঞ্চিত টাকা আর গয়না বেঁচে মামাকে
কলকাতার বড় হাসপাতালে পাঠিয়েছিল ।
আজ আমার উপড় ভার ছিল মামাকে বাড়ী
নিয়ে যাওয়ার, সে সারাদিন আজ মামার ঘর
পরিষ্কার করে,তার পছন্দের খাবার রান্না করে
উপোস করে বসে থাকবে মামার বাড়ী ফেরার জন্য।




আমি আমার দায়িত্ব ঠিকই পালন করেছিলাম,
মামাকে নিয়ে দুপুর ২টায় বাড়ী
পৌঁছানোর কথাছিল, পো্স্টমর্টেম করে
DEATH CERTIFICATE নিয়ে বাড়ী ফিরতে
একটু দেরী হয়ে গেল! রাত ১০ টা বেজে গেল!


তবে মামীর কাছে মামাকে ঠিক ফিরিয়ে
নিয়ে গেছি,গাড়ীতে করে,ফুল দিয়ে সাজিয়ে,
শুধু প্রাণহীন দেহ এই যা তফাৎ ! !

শুধু আওরাই সুকান্তর সেই মন্ত্রঃ

‘শোনরে মালিক, শোনরে মজুতদার,
তোদের প্রাসাদে জমা হ’ল কত
মৃত মানুষের হাড় !
হিসাব কি দিবি তার ?
মামাকে আমার কেড়েছিস তোরা
ভেঙ্গেছিস শত বাড়ী,
সেকথা কি আমি জীবনে মরণে
কখনো ভূলতে পারি ?

আদিম হিংস্র মানবিকতার
যদি আমি কেউ হই
স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের
চিতা আমি তুলবই ।‘

আমার আর শীত করেনা ।।

বি.দ্র: AMRI হাসপাতলের 'মালিক'পক্ষ হাসপাতালের বেসমেন্টে প্রচুর দাহ্য 'মজুত' করেছিল বলেই আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছিল বলে অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞদের ধারনা । সুকান্ত-র মত দূরদর্শী কবির কাব্যাংশ এজন্যই ব্যবহার করেছি আমার অনুভূতি প্রকাশের জন্য । কবির কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ ।'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা কর্তব্যনিষ্ঠ লেখক হবার চেষ্টা করেছি, পারিনি তবে একনিষ্ঠ পাঠক হবার চেষ্টায় আছি। কবিতা ভালো লেগেছে। আরেকটু গতিশীল হতে ভালো হতো।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
খন্দকার নাহিদ হোসেন সুকান্তর মতোই বলতে মন চায়- আমাদের কি সত্যি শীত করে? কবিতা মানেই তো আবেগ আর তাতে ভাসলাম...।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
সালেহ মাহমুদ ওহ, মর্মস্পর্শী কবিতা। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ কবিতার আকার পেয়েছে আঙ্গিক পেয়েছ কম। কিন্তু ভাব আছে তোমারস।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১২
পাঁচ হাজার খুবই করুণ একটা দৃশ্য রচনা করলেন দাদা। খুবই মর্মস্পর্শী
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া কবিতার বক্তব্য সত্যি নাকি দাদা? খুবই করুন কাহিনী ....আর সুকান্তের কবিতা জুড়ে দিয়ে অসাধারণ করেছেন পুরো বিষয়টাকে
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
সেলিনা ইসলাম খুবই বেদনাদায়ক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ! আপনাকে বা আপনার পরিবারকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা নেই । তবে ধিক্কার জানাই হাস্পাতাল কতৃপক্ষকে যেখানে মানুষ জীবন পাবার আশায় এসে এমন করে লাশ হয়ে যেতে হয় , এদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই ! সৃষ্টিকর্তা মামাকে শান্তিতে রাখুন ।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১২
বিন আরফান. অনেক সময় ও সাধনার ফসল. খুব ভালো লাগলো দাদা.
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২
এই মেঘ এই রোদ্দুর কষ্টের কবিতা ভাল লাগল

০৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী